September 20, 2024, 5:45 am
দৈনিক আলো প্রতিদিন ডেস্ক: খাদ্য শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠে পুরো দমে নতুন বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ধানের বাম্পার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় বোরো চাষী কৃষকেরাও খুশি। তবে ধান কাটা শুরুতেই ধানকাটা শ্রমিক সংকটের মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
জানা গেছে, বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলী মাঠে আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও কৃষকের বাড়ির উঠানে নতুন বোরো ধান মাড়াই শুরু হয়েছে। জমিতে ধান পেঁকে উঠায় দ্রুত কাটার জন্য ধানকাটার শুরুতেই উপজেলার কৃষকেরা শ্রমিক সংকটের মুখে পড়েছেন। আর শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় অনেকে কৃষকেরা ধানকাটা শ্রমিকের খোঁজে নেমে পড়েছেন। তাঁরা বিশেষ করে পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সাথিয়া, নাকালিয়া বেড়া, রংপুর, চাপাইনবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, শাহাজাদপুর এলাকাসহ যেসব এলাকায় ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যায়। সেখানে খোঁজ খবর লাগিয়ে ধানকাটার জন্য শ্রমিকদের সাথে অগ্রিম টাকা বায়না করছেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি ২৯, ব্রি ২৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯০, ব্রি কাটারীভোগ, সুবললতা, রড মিনিকেট, স্থানীয় জাত আব্দুল গুটি সহ বিভিন্ন জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সার, ডিজেল, বিদ্যুতের কোন সমস্যা না হওয়ায় এ বছর নির্বিঘ্নে বোরো ধানের আবাদ করতে পেরেছেন।
উপজেলার লাউতা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ বছর ধানের বাম্পার ফলনও মিলছে। পাশাপাশি হাট বাজারে উঠা নতুন ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য কৃষকদের দাবী হাইব্রীড সহ কয়েকটি জাতের ধানের ফলন আরোও বেশি।
উপজেলার সিলেট গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুল হালিম জানান, প্রতি বিঘাতে ব্রি-৯০, কাটারীভোগ, রডমিনিকেটসহ বর্তমানে যে সকল জাতের ধান কাটা হচ্ছে তা প্রকার ভেদে প্রতি বিঘায় ২২-২৪ মণ হারে ফলন হচ্ছে। বাজারে কাটারীভোগ ১৩০০ টাকা মণ, সুবললতা ১১৫০ টাকা মণ, রড মিনিকেট ১২৬০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বর্তমানে কৃষকের বাড়ি থেকে জমির দুরত্ব ভেদে মণ প্রতি ৬ থেকে ৮ কেজি ধান পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে ধানকাটা শুরু করেছে। আর টাকায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা বিঘায় ধান কাটাচ্ছেন। কিন্তু উপজেলায় হারবেষ্টার মেশিন দিয়েও বিঘায় ২ হাজার টাকা খরচে ধান কাটা গেলেও বেশির ভাগ খড় নষ্ট হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্যের কথা চিন্তা করে অনেকেই কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। তাই কৃষি শ্রমিকের চাহিদাও বেশি।
তবে গরমের কারণে ধানকাটা শ্রমিকের সংকটও রয়েছে বলে জানান, উপজেলার গোন্তা গ্রামের আরেক কৃষক আরমান সরকার। তিনি আরো বলেন, জমিতে পাঁকা ধান পড়ে আছে শ্রমিকের অভাবে কাটতে পাচ্ছি না। গরমের যে পরিস্থিতি কখন যে কি হয় আল্লাহ জানে। কয়েক দিন ধরে শ্রমিক খুজে পাচ্ছেন না। পেলে ও চুক্তি ছাড়া ধান কাটবে না। ছুটা শ্রমিক পাওয়াও যাচ্ছে না। তাই ধান নিয়ে কি যে বিপদে পড়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের আসতে দেরি হলেও তিন চার দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাবে। তবুও শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ধান কাটার হারভেষ্টার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। সে মেশিন গুলো দিয়ে মাঠে ধান কাটালে শ্রমিক সংকট থাকবে না।
তিনি আরো জানান, আমরা কৃষকদের কে দ্রুত পাঁকা ধান কাটার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি এবং এখন পর্যন্ত যে সকল জমিতে বোরো ধান কাটা চলছে সেখানে কৃষক বোরো ধানের বাম্পার ফলনও পাচ্ছেন। আমরা আশা করছি চলতি বোরো মৌসুমে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হবে উপজেলায়।